Psychology of Mind – পর্ব -১ (মনের অদৃশ্য ভাষা) | বঙ্গ নিউজ

Psychology of Mind – পর্ব -১ (মনের অদৃশ্য ভাষা)

18 October 2025, 9:22:48

শিরিন আকতার:

মানুষ পৃথিবীর একমাত্র প্রাণী, যার চিন্তা তার বাস্তবতাকে বদলে দিতে পারে।
আমরা যা ভাবি, তা-ই ধীরে ধীরে আমাদের চরিত্র, অভ্যাস ও সিদ্ধান্তে রূপ নেয়।
কিন্তু মজার বিষয় হলো — অধিকাংশ মানুষই জানে না, সে দিনে কতটা নিজের সাথে কথা বলে।

মনোবিজ্ঞানের গবেষণায় দেখা গেছে, একজন মানুষ প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৬০,০০০ থেকে ৭০,০০০টি চিন্তা করে।
এর মধ্যে ৮০% চিন্তাই নেতিবাচক এবং ৯৫% চিন্তা পুনরাবৃত্তিমূলক — অর্থাৎ গতকালের চিন্তারই পুনরাবৃত্তি।
এই অভ্যন্তরীণ কথোপকথনকেই বিজ্ঞানীরা বলেন Inner Dialogue বা “মনের ভাষা”।

এই মনের ভাষাই নির্ধারণ করে আমাদের আত্মসম্মান, আত্মবিশ্বাস, এমনকি আমাদের সুখের সীমাও।
যখন আমরা বলি,

> “আমি পারব না”,
“আমার জীবন এমনই”,
“আমার ভাগ্য খারাপ”—
তখন আমরা নিজের মস্তিষ্কে নেতিবাচক স্নায়ুপথ (negative neural pathway) তৈরি করি।

মস্তিষ্কের গঠন এমন যে, এটি আমাদের কথাগুলো বাস্তব ধরে নেয়।
তাই আমরা যত বেশি “আমি পারব না” ভাবি, ততই মস্তিষ্ক আমাদের শক্তি কমিয়ে দেয়।
একে বলে Neuroplasticity — অর্থাৎ, মস্তিষ্ক নিজের গঠন বদলাতে পারে চিন্তার প্রভাবে।

অন্যদিকে, যখন কেউ নিজের সাথে ইতিবাচকভাবে কথা বলে — যেমন,

> “আমি শিখছি”,
“আমি চেষ্টা করছি”,
“আমি সময় নিচ্ছি”—
তখন মস্তিষ্কে নতুন স্নায়ুপথ তৈরি হয় যা আত্মবিশ্বাস ও উদ্যম বাড়ায়।

এটাই হলো Cognitive Reframing — কোনো ঘটনাকে নতুনভাবে দেখা।
মনোবিজ্ঞানের মতে, এই প্রক্রিয়া মস্তিষ্কের কর্টেক্স অংশকে সক্রিয় করে,
যেখানে যুক্তি, পরিকল্পনা ও সচেতনতা কাজ করে।
ফলাফল — মানুষ নেতিবাচক চিন্তা থেকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে পরিবর্তিত হয়।

মজার ব্যাপার হলো, এই অভ্যন্তরীণ কথোপকথন শুধুই চিন্তার নয়, এটি শারীরিক প্রভাবও ফেলে।
যখন কেউ নিজেকে ছোট করে ভাবে, তখন শরীরে কর্টিসল (Cortisol) নামের স্ট্রেস হরমোন বেড়ে যায়,
হৃদস্পন্দন বাড়ে, ঘুমে সমস্যা হয়।
অন্যদিকে, ইতিবাচক চিন্তা বাড়ালে সেরোটোনিন ও ডোপামিন নিঃসৃত হয় — যা মুড ভালো রাখে ও মন শান্ত করে।

তাহলে প্রশ্ন আসে —
এই মনের ভাষা আমরা কীভাবে বদলাতে পারি?

মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, তিনটি অভ্যাস এখানে সবচেয়ে কার্যকরঃ

১. সচেতন চিন্তা লেখা (Thought journaling):
দিনের শেষে ৫ মিনিট সময় নিয়ে নিজের মনের কথাগুলো লিখে রাখা।
লিখলেই বোঝা যায়, কোন চিন্তাগুলো আসলে অপ্রয়োজনীয় বা ক্ষতিকর।

২. নিজের সাথে সদয় হওয়া (Self-compassion):
নিজেকে তিরস্কার না করে, বন্ধুর মতো আচরণ করা।
কারণ আত্মসমালোচনা নয়, আত্মসহানুভূতিই পরিবর্তনের প্রথম ধাপ।

৩. চিন্তার পুনর্লিখন (Reframing):
যে চিন্তা ক্ষতি করছে, সেটাকে নতুনভাবে লেখা।
যেমন— “সব শেষ” → “একটা নতুন শুরু দরকার।”

মনের বিজ্ঞান বলে — চিন্তা যদি বীজ হয়, তবে বাস্তবতা হলো তার ফল।
বীজের ধরনই ফলের স্বাদ নির্ধারণ করে।
তাই প্রতিদিন নিজের চিন্তা বেছে নেওয়াই হলো সবচেয়ে বড় আত্মউন্নয়ন।

Psychology of Mind বলে:
“তুমি নিজের সাথে যেমন কথা বলো, ঠিক তেমনি হয়ে ওঠে তোমার ভবিষ্যৎ।”

 

বঙ্গ নিউজ ওয়েবসাইট থেকে কোনো তথ্য গ্রহণ করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আমাদের অনুমতি ব্যতীত বঙ্গ নিউজ ওয়েবসাইটের কোনো সংবাদ, ছবি, ভিডিও বা অন্যান্য কনটেন্ট হুবহু বা আংশিক কপি, সংরক্ষণ, ব্যবহার বা পুনঃপ্রকাশ করা আইনগতভাবে দণ্ডনীয়। এই ধরনের কোনো কর্মকাণ্ড চিহ্নিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আমাদের কনটেন্ট ব্যবহার করতে চাইলে অনুগ্রহ করে আগে আমাদের লিখিত অনুমতি গ্রহণ করুন।

 বঙ্গ নিউজ কর্তৃপক্ষ

মন্তব্য: