তেরখাদায় কমিউনিটি ক্লিনিগুলোর বেহালদশা,বিপাকে দেড় লাখ মানুষ

16 September 2025, 10:09:35

নিজস্ব প্রতিবেদক:

তেরখাদা উপজেলার প্রায় দেড় লাখ মানুষ বর্তমানে কার্যত স্বাস্থ্যসেবাবঞ্চিত। উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের ১৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে অধিকাংশ ক্লিনিকের ভবন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে সরকারি ওষুধ সরবরাহও। ফলে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগণ।

উপজেলার পানতিতা, বারাসাত ও রামমাঝি কমিউনিটি ক্লিনিকসহ অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে—দেয়ালে গভীর ফাটল, ছাদের প্লাস্টার খসে পড়া, কোথাও কোথাও রড বেরিয়ে থাকা, দরজা-জানালা ভাঙা ও অচল শৌচাগারের করুণ অবস্থা। অধিকাংশ ক্লিনিকে নেই বিদ্যুৎ সংযোগ, ফলে গ্রীষ্মের এই সময়টিতে স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজ করা হয়ে উঠেছে অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। তবুও প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন দায়িত্ব পালন করছেন কর্মরত স্বাস্থ্যসেবাকর্মীরা।

বারাসাত কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন স্থানীয় ময়না বেগম। কয়েকদিন ধরে তার মেয়ে জ্বরে আক্রান্ত থাকায় ওষুধের আশায় ক্লিনিকে গিয়েও কোনো সেবা পাননি। স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়ে দেন, ওষুধের মজুত নেই। ময়নার মতো অনেকেই সরকারি স্বাস্থ্যসেবার ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় বিকল্প খুঁজে পাচ্ছেন না।

পানতিতা কমিউনিটি ক্লিনিকে আসা মার্জিয়া সুলতানা জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অনেক দূরে হওয়ায় বাধ্য হয়েই তিনি ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনে এসেছেন। কিন্তু এখানে চিকিৎসা নেওয়ার মতো কোনো পরিবেশ নেই।

কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) হিসেবে কর্মরত জলি (বারাসাত), নেয়ামত হোসেন (পানতিতা) ও এমডি বাহারুল ইসলাম (রামমাঝি) তিনজনই জানিয়েছেন, তারা প্রতিদিন আতঙ্ক নিয়ে কাজ করছেন। তাদের মতে, ভবনগুলোর অবস্থা এতটাই নাজুক যে, কখন ছাদের কোনো অংশ ভেঙে পড়ে যায়—সেই আশঙ্কা নিয়েই তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। শৌচাগার ব্যবহারের অনুপযোগিতা এবং বিদ্যুৎ না থাকায় প্রতিদিনকার কাজকর্ম অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে উঠেছে।

ওষুধ সরবরাহ নিয়েও চরম সংকট দেখা দিয়েছে। একাধিক সিএইচসিপি জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে ২২ প্রকার জরুরি ওষুধের ঘাটতি রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আয়রন, জিংক, ব্যথানাশক, সর্দি-কাশির সিরাপ, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ওষুধ। রোগীরা প্রতিদিন এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন, ক্ষোভ প্রকাশ করছেন, এবং মাঝে মাঝে স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর চাপ সৃষ্টি করছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা জানান, তাদের হাতেও কোনো বিকল্প নেই।

তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুরুন্নবী তুহিন জানান, উপজেলাটির বেশিরভাগ ক্লিনিক ভবন বহু পুরনো এবং সংস্কারের অভাবে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অনেক ভবনে বসার সুযোগ পর্যন্ত নেই। তিনি বলেন, জরাজীর্ণ ভবনগুলোর তালিকা তৈরি করে তা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। ভবিষ্যতে সংস্কার বা নতুন ভবন নির্মাণের মাধ্যমে এই সংকট নিরসনের চেষ্টা করা হবে।

ওষুধ সরবরাহ বিষয়ে ডা. তুহিন জানান, গত এক বছর ধরে সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে এবং বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তার আশা, আগামী মাস থেকেই পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

উল্লেখ্য, তেরখাদা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে অবস্থিত ১৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে অধিকাংশই এখন কার্যত অচল। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ এবং ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে এই ক্লিনিকগুলো থেকে আবারও টিকাদান, মা ও শিশু স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনা সেবাসহ প্রাথমিক চিকিৎসা চালু রাখা সম্ভব বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

সরকার ঘোষিত ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য ছিল তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু তেরখাদার বাস্তবতা সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের চিত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

বঙ্গ নিউজ ওয়েবসাইট থেকে কোনো তথ্য গ্রহণ করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আমাদের অনুমতি ব্যতীত বঙ্গ নিউজ ওয়েবসাইটের কোনো সংবাদ, ছবি, ভিডিও বা অন্যান্য কনটেন্ট হুবহু বা আংশিক কপি, সংরক্ষণ, ব্যবহার বা পুনঃপ্রকাশ করা আইনগতভাবে দণ্ডনীয়। এই ধরনের কোনো কর্মকাণ্ড চিহ্নিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আমাদের কনটেন্ট ব্যবহার করতে চাইলে অনুগ্রহ করে আগে আমাদের লিখিত অনুমতি গ্রহণ করুন।

 বঙ্গ নিউজ কর্তৃপক্ষ