শ্রদ্ধায় স্মরণে আলোর পদযাত্রী

✍️ সুজাতা বেরা
গতকাল মেদিনীপুর কুইজ কেন্দ্র সোশাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, আস্তাড়া স্পোর্টস অ্যাণ্ড কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন এবং তপতী পাবলিশার্স -এর সমবেত উদ্যোগে আস্তাড়া, ডিমারীহাটে স্থিত প্রত্যাশা গেস্ট হাউসে ড. মৌসম মজুমদার -এর যে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়, তা জেলা তথা রাজ্যে সংবেদনশীল অনুভবের এক আলোকদীপ্ত অধ্যায় হয়ে রইল।
গত ২৭ নভেম্বর, ২০২৪ আমাদের সবার প্রিয় মৌসম-এর অকালপ্রয়াণ আত্মজন হারানোর যে বিয়োগব্যথা দিয়ে যায়, তা প্রগতিপন্থী সকল মানুষের কাছেই এক চিরন্তন শূন্যতা দিয়ে গেলেও গতকাল শুভানুধ্যায়ী সবার কণ্ঠে তাঁর চিরঅম্লান স্মৃতিচারণার সঙ্গে সমান্তরালভাবে ধ্বনিত হয়, তাঁর কর্মময় জগৎকে আগামীর পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃঢ় অঙ্গীকার।
মৌসম মানে আজ শূন্যতা নয়, শূন্যতা পূরণের দৃপ্ত ঘোষণা। মৌসম মানে নেতিবাচকতা নয়, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকিত উত্তরণ। মৌসম মানে হতাশা নয়, আশাবাদী হয়ে আগামীর পথ চলা। মৌসম মানে জীবনের প্রতি বিশ্বাস হারানো নয়, মৃত্যুকে জয় করার দৃঢ়সংকল্প বাঁচিয়ে রাখা। মৌসম মানে চোখের জল নয়, অশ্রু মুছে আত্মশক্তিতে বলীয়ান হওয়া। মৌসম মানে হেরে যাওয়া নয়, আলোকসন্ধানী হয়ে জয় ছিনিয়ে নেওয়া। মৌসম মানে স্বপ্নভঙ্গ নয়, স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হয়ে আকাশছোঁয়া অনুভবে ব্রতী হওয়া।
আত্মধর্মে স্বীকৃত হওয়া মৌসম কোনোদিন ধর্মীয় অনুশাসনের সংকীর্ণ বেড়াজালে নিজেকে বন্দি করতে চায় নি। পরিবর্তে জীবনে জীবন যোগ ক’রে মানুষের সাথে মানুষের পাশে থাকতে চেয়েছিল চিরজীবন। সাফল্যের শীর্ষে ওঠার পরেও বৃহন্নলা থেকে সমাজের অন্ত্যজ শ্রেণি কেউই ব্রাত্য হয় নি তাঁর কাছে। মানবতা আর বিজ্ঞানমনস্কতার মেলবন্ধনে নিজেকে গড়ে তুলেছিল সংকীর্ণ সংস্কারের অনেক ঊর্ধ্বে। তাই গতকাল সমাজনির্দিষ্ট পারলৌকিক ক্রিয়া তথা শ্রাদ্ধশান্তি, ধূপধুনোর ঊর্ধ্বে তাঁর শ্রদ্ধাবাসরে দুপুর থেকে সন্ধে বিরামহীন ভাবে জ্বলে উঠেছিল এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা। তাঁর প্রিয়জনরা এক মুহূর্তের জন্যও নিভতে দেয় নি তাঁর কর্মোজ্জ্বল আলোকস্তম্ভ।
গতকাল চয়ন-এর মাউথ অরগান এ যখন বেজে উঠেছিলো তোমার অন্যতম প্রিয় গান…..
“সেই যে হলুদ পাখি
বসে জামরুল গাছের ডালে,
করতো ডাকাডাকি
আমার শৈশবের সকালে,
একদিন গেল উড়ে
জানি না কোন্ সুদুরে ..
ফিরবে না সেকি ফিরবে না
ফিরবেনা আর কোনোদিন,
ফিরবে না সেকি ফিরবে না
ফিরবে না আর কোনোদিন।”
তখন সহজ স্বাভাবিক আবহে সবার চোখ সিক্ত হলেও প্রত্যেকের হৃদয়েই তোমাকে ঘিরে জ্বলে উঠেছিল আত্মপ্রত্যয়ের আলো – “তুমি শান্তিতে ঘুমাও, আমরা থাকবো জেগে। সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখা মানুষগুলোকে হারতে দেবো না আর। তোমার চেতনা বুকে নিয়েই অন্ধজনের বন্ধদ্বার খোলার দায়িত্ব আমরা নেবো।” – হ্যাঁ আজকের দিনে এটাই তোমার জয়।
নিত্যদিনের জীবনপ্রবাহে আসা – যাওয়ার এই চিরন্তন স্রোতে তোমাকে হারিয়ে হয়তো আজ আমরা এক কঠোর বাস্তবের সম্মুখীন হলাম। কিন্তু প্রকৃতই তুমি আমাদের অন্তহীন প্রেরণার উৎস হয়ে রইলে। বড়ো অসময়ে তোমার অচিনপুরে যাত্রা। তবু আমাদের কামনা – প্রতিটি পরিবার যেন ফিরে পায় তোমার মতো সন্তান৷ প্রতিটি বিদ্যালয় যেন ফিরে পায় তোমার মতো আদর্শ শিক্ষক, প্রতিটি সমাজ যেন ফিরে পায় তোমার মতো সমাজবান্ধব। প্রকৃতির মুক্ত অঙ্গনে যেন জেগে থাকে তোমার মতো বৃক্ষপ্রেমী মানুষ, নিকষ অন্ধকারেও যেন চিরজাগরূক হয় তোমার কর্মসংস্কৃতির আলো। আগামী প্রজন্মের মাঝে যেন উদবোধিত হয় তোমার মননদৃপ্ত উচ্চারণ। জীবনমরণের সীমানা ছাড়িয়ে অনেক দায়িত্ব দিয়ে গেলে তোমার উত্তরসূরিদের।
“তোমার পতাকা যারে দাও, তারে বহিবারে দাও শক্তি।”
🌿🍂🌿🍂🌿🍂🌿🍂🌿🍂🌿🍂🌿🍂🌿🍂🌿🍂🌿
বঙ্গ নিউজ ওয়েবসাইট থেকে কোনো তথ্য গ্রহণ করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আমাদের অনুমতি ব্যতীত বঙ্গ নিউজ ওয়েবসাইটের কোনো সংবাদ, ছবি, ভিডিও বা অন্যান্য কনটেন্ট হুবহু বা আংশিক কপি, সংরক্ষণ, ব্যবহার বা পুনঃপ্রকাশ করা আইনগতভাবে দণ্ডনীয়। এই ধরনের কোনো কর্মকাণ্ড চিহ্নিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আমাদের কনটেন্ট ব্যবহার করতে চাইলে অনুগ্রহ করে আগে আমাদের লিখিত অনুমতি গ্রহণ করুন।
বঙ্গ নিউজ কর্তৃপক্ষ

























মন্তব্য: