বিধান চন্দ্র রায় /কোর্ট পাড়া কুষ্টিয়া :
আজ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, বুধবার, বিশ্বকর্মা পুজো।
ছেলেবেলায় আমাদের বাড়িতে সব পূজো হত। কিন্তু বিশ্বকর্মা পূজা হতে দেখিনি। বিশ্বকর্মা পূজা হতো খুব ধুমধাম করে গোপীনাথ বাড়িতে। সে পূজা হতো মূলত স্বর্ণকারদের উদ্যোগে।
বিশ্বকর্মা পুজো অনুষ্ঠিত হতো কন্যা সংক্রান্তি তিথি 'তে। সূর্যের সিংহ রাশি থেকে কন্যা রাশিতে গমনের দিন। ৩১ ভাদ্রতে হতো, মানে ভাদ্র মাসের শেষ দিনে।
বিশ্বকর্মা সৃষ্টির দেবতা ও বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের স্থপতি হিসেবে পূজিত হন। বিশ্বকর্মা পুজো মূলত কারখানা, দোকান, অফিস, যন্ত্রপাতি ও যানবাহন সম্পর্কিত স্থানে পালিত হতো। এই দিনে বিশ্বকর্মা দেবতার আরাধনা করা হয়। বিশ্বকর্মা পুজোর শুভক্ষণ হিসেবে অমৃত যোগ ও মাহেন্দ্র যোগ নির্বাচন করা হয়ে থাকে। এই সময় গুলোতে পুজো করলে শুভফল পাওয়া যায় বলে জানা যায়।
বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রথা রয়েছে। যা বাঙালির কাছে একটি আনন্দদায়ক ঐতিহ্য। এই দিনটি দুর্গাপুজোর আগমনী বার্তা শুনিয়ে দিয়ে যায়।
বিশ্বকর্মা পুজোর দিন ঘুড়ি উড়ানোর আয়োজন করা হয় এখনো বিভিন্ন জায়গায় মহা আড়ম্বরে। পশ্চিম বঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, বিহার, ও ভারতের অন্যান্য প্রান্তিক এলাকা 'তে তা দেখা যায়।
উত্তর কলকাতায়, সন্তোষ মিত্র স্কয়ার,বৃহন্নলা মাঠ, ইস্টার্ন কলেজের মাঠ, সল্টলেক লেকসাইড এলাকা তে ঘুড়ি ওড়ানো হয়। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের আশে পাশের খোলা মাঠে স্থানীয়রা ঘুড়ি উড়িয়ে থাকেন। হাওড়া ও হুগলি এই অঞ্চলের গ্রামীণ এলাকায়ও বিশ্বকর্মা পুজোর দিন ঘুড়ি উড়ানোর প্রচলন রয়েছে।ঝাড় খণ্ডের রাঁচি ও জমশেদপুরেও ঘুড়ি উড়ানোব দৃশ্য সকলের দৃষ্টি কেড়ে নেয়।
প্রাচীনকালে, বিশেষ করে ১৮৫০ সালের পর থেকে, জমিদাররা তাদের প্রাসাদ ও বাড়ির ছাদে ঘুড়ি উড়িয়ে এই ঐতিহ্য পালন করতেন। এটি একদিকে যেমন আনন্দের উৎস ছিল, তেমনি অন্যদিকে এটি বিশ্বকর্মা দেবতার প্রতি শ্রদ্ধা এবং কারিগরি দক্ষতার প্রতীক হিসেবেও দেখা হতো।
বিশ্বকর্মা পুজোর দিন ঘুড়ি উড়ানোর প্রথা বাঙালি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।বিশ্বকর্মা পুজোর দিন কলকাতার আকাশে রঙিন ঘুড়ির মেলা বাঙালি সংস্কৃতির একটি চিরন্তন চিত্র। এই দিনটি শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং এটি একটি আনন্দদায়ক খেলা, সৃজনশীলতা, ঐক্য এবং সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হয়। বহু জায়গায় স্থানীয় ক্লাব বা পাড়া কমিটি বড় মেলা আয়োজন করে, যেখানে ঘুড়ি প্রতিযোগিতা হয়।
বাংলাদেশে বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে ঘুড়ি ওড়ানোর ঐতিহ্য পশ্চিমবঙ্গের মতো ব্যাপকভাবে প্রচলিত নয়। তবে, কিছু অঞ্চলে এই প্রথা দেখা যায়।
ঢাকার নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জে ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে কিছু শিল্পাঞ্চল, কারখানা ও দোকানে পুজো হয়। এইসব স্থানে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রচলন আছে।
কুষ্টিয়ার মোহিনী মিলস্ লিমিটেডের মাঠে একসময় বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে ঘুড়ি ওড়ানোর ঐতিহ্য ছিল। বিশ্বকর্মা পুজোতে ঘুড়ি ওড়ানো বাঙালি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা বিশেষ করে শিল্পাঞ্চল ও কলকারখানার আশেপাশে পালিত হয়।(মোহিনী মিলস্ ছিল ব্রিটিশ ভারতের বস্ত্র শিল্পের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান। ১৯০৮ সালে মোহিনী মোহন চক্রবর্তী কুষ্টিয়ায় এই মিলটি প্রতিষ্ঠা করেন, যা তৎকালীন ভারতবর্ষের অন্যতম বৃহত্তম টেক্সটাইল মিল ছিল।)
বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে ঘুড়ি ওড়ানোর ঐতিহ্য মোহিনী মিলস্ মাঠে পালিত হতো। যা স্থানীয়দের মধ্যে আনন্দ ও ঐক্যের প্রতীক ছিল। বর্তমানে এই ঐতিহ্য কিছুটা কমে গেলেও, স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠদের মধ্যে তা স্মৃতি হিসেবে রয়ে গেছে এখনো ।
(ছেলেবেলার ডায়েরি থেকে)
প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান,নির্বাহি সম্পাদক : মোঃ বেনজীর হোসেন,বার্তা সম্পাদক : চন্দন ভট্টাচার্য্য, উপদেষ্টা : এ্যাড. সরদার আবুল হাসেম ডাবলু, উপদেষ্টা : তরুন চক্রবর্তী বিষ্ণু। মোবাইল : 01639924798, অফিস : রামনগর (মজিবর মোড়) , রূপসা, খুলনা।1260