#পরিচয় পর্ব – ২ # / কুষ্টিয়ার কৃতি সন্তান | বঙ্গ নিউজ

#পরিচয় পর্ব – ২ # / কুষ্টিয়ার কৃতি সন্তান

30 August 2025, 1:11:29

 

          🌹আব্দুল জব্বার🌹
✍️বিধান চন্দ্র রায়

“দেশবরেণ্য শিল্পী আব্দুল জব্বারের আজ ৮ম  প্রয়াণ দিবস”

সঙ্গীতশিল্পী আব্দুল জব্বারের সঙ্গীত প্রতিভার প্রকাশ পেতে থাকে ষাটের দশকের শেষ দিকে যখন সে স্কুলের ছাত্র। সে সময় কুষ্টিয়ার যে কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তার উপস্থিতি চোখে পড়তো। স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান,শারদীয় উৎসবের পুনমিলনী, নাটক ও পাড়ার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সরস্বতী পুজোর অনুষ্ঠান,সব অনুষ্ঠানে তার কণ্ঠে গান বেজে উঠতো। মোহিনী মিলস্ লিমিটেডের স্বত্বাধিকারি দেবীপ্রসাদ চক্রবর্তীর কনিষ্ঠ কন্যা বাঁশরি রায় জানালেন, “আমাদের মোহিনী মোহন বিদ্যাপীঠে র সরস্বতী পুজোর অনুষ্ঠানে জব্বার গেয়েছিল—- ‘বাঁশ বাগানের মাথার ওপর চাঁদ উঠেছে ওই’ খুব সুন্দর লেগেছিলো এখনো মনে আছে !”

আব্দুল জব্বার একজন বাংলাদেশি সঙ্গীত শিল্পী,
গীতিকার, ব্যাবসায়ী, শব্দ সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তার
অবদান বাংলাদেশী মানুষেরা মনে রাখবে চিরদিন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তার ভূমিকা ছিল অসামান্য। একদিকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র হতে প্রচারিত হয়েছে, “জয় বাংলা বাংলার জয়/সালাম সালাম হাজার সালাম,” তার কণ্ঠে গান,যা মুক্তিযুদ্ধের সময় যুগিয়েছে অনুপ্রেরণা। তেমনি ভারতের খ্যাতিমান শিল্পীদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে অনুষ্ঠান করে সংগ্রহ করেছেন মুক্তিযুদ্ধ সহায়তা তহবিল।

আব্দুল জব্বার ১৯৩৮ সালের ৭ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলা শহরের আড়ুয়াপাড়ায়, জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম দাখিল উদ্দিন প্রমানিক ও মায়ের নাম ফুলজান নেছা।

১৯৫৬ সালে তিনি মেট্রিক পাশ করেন। তারপর কলেজে ভর্তি হবেন ব’লে চলে যান ঢাকা। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে চোখে পড়ে যান অনেক গুণী মানুষের। বেতার ব্যক্তিত্ব ও গীতিকার কবি আজিজুর রহমান তাকে নিয়ে যান ঢাকা রেডিওতে। অডিশন দিয়ে ১৯৫৮ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকা রেডিওতে গান গাওয়া শুরু করেন।

চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম কণ্ঠ দিয়েছিলেন ১৯৬২ সালে। তিনি বিটিভিতে তালিকাভুক্ত শিল্পী হন ১৯৬৪ সালে। একই বছরে জহির রায়হান পরিচালিত “সঙ্গম” ছবির গানে কণ্ঠ দিয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন।

সত্য সাহার সুরে তাঁর গাওয়া ‘তুমি কি দেখেছ কভু’ গানটি দিয়ে রাতারাতি পরিচিতি লাভ করেন,সেটা ছিল ১৯৬৮ সাল সিনেমার নাম ছিল ‘এতটুকু আশা’। সে বছরে ‘পিচ ঢালা পথ’ সিনেমাতে রবিন ঘোষের সুরে ‘পিচ ঢালা এই পথটারে ভালবেসেছি’ ও ‘ঢেউয়ের পর ঢেউ’ সিনেমাতে রাজা হোসেন খানের সুরে ‘সুচরিতা যেওনাকো’, আর ‘কিছুক্ষণ থাকো’- এ দুটি গান তাকে এনে দেয় আকাশ চুম্বী জনপ্রিয়তা। ‘ওরে নীল দরিয়া’ ছিল আব্দুল জব্বারের ক্যারিয়ারে মাইলফলক। এটি তিনি ১৯৭৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘সারেং বৌ’ সিনেমাতে আলম খানের সুরে গেয়েছিলেন। গানটির প্রতি বিশেষভাবে দুর্বলতা ছিল তার। ‘কোথায় আমার নীল দরিয়া’ ছিল তার জীবনের শেষ ও একমাত্র মৌলিক গানের অ্যালবাম।

আব্দুল জব্বারের প্রথম স্ত্রী শাহীন জব্বার ছিলেন একজন জনপ্রিয় গীতিকার। তার গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন আব্দুল জব্বার, সুবীর নন্দী, ফাতেমা তুজ জোহরার মত জনপ্রিয় বাংলাদেশি সঙ্গীতশিল্পীরা। তাদের সন্তান মিথুন জব্বারও একজন সঙ্গীতশিল্পী। জব্বারের দ্বিতীয় স্ত্রী রোকেয়া জব্বার মিতা যিনি ২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর, আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর, মৃত্যুবরণ করেন।

অর্ধ শতাব্দী ধরে তিনি বিচরন করেছেন সঙ্গীত ভুবনে।
সংগীতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি পেয়েছেন অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা। এর মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদক (১৯৭৩), একুশে পদক (১৯৮০), স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৯৬), বাচসাস পুরস্কার (২০০৩), সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস-আজীবন সম্মাননা (২০১১) ও জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার।

হয়তো তিনি জীবনে আরও অনেক কিছু অর্জন করতে পারতেন! কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, তিনি সঙ্গদোষে
নারী, সুরা ও অন্যান্য নেশায় জীবনের বেশ কিছুটা সময় নষ্ট করে ফেলেন। আশির দশকে তিনি রাজাবাজারে থাকতেন, অনেকদিন আমরা পরিচিতরা তাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে এসেছি। যদিও এখন এ প্রসঙ্গ অবান্তর।

খ্যাতিমান শিল্পী আবদুল জব্বার ২০১৭ সালের জুলাই মাসে কিডনি, হার্ট, প্রস্টেটসহ বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ১ আগস্ট নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ৩০ আগস্ট তিনি এই হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

বঙ্গ নিউজ ওয়েবসাইট থেকে কোনো তথ্য গ্রহণ করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আমাদের অনুমতি ব্যতীত বঙ্গ নিউজ ওয়েবসাইটের কোনো সংবাদ, ছবি, ভিডিও বা অন্যান্য কনটেন্ট হুবহু বা আংশিক কপি, সংরক্ষণ, ব্যবহার বা পুনঃপ্রকাশ করা আইনগতভাবে দণ্ডনীয়। এই ধরনের কোনো কর্মকাণ্ড চিহ্নিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আমাদের কনটেন্ট ব্যবহার করতে চাইলে অনুগ্রহ করে আগে আমাদের লিখিত অনুমতি গ্রহণ করুন।

 বঙ্গ নিউজ কর্তৃপক্ষ

মন্তব্য: