দেশের ৯ জেলায় বন্যার পরিস্থিতি ভয়াবহ, ৬ জনের প্রাণহানি; ৩৪ লাখ ৫০ হাজার মানুষ পানি বন্দী | বঙ্গ নিউজ

দেশের ৯ জেলায় বন্যার পরিস্থিতি ভয়াবহ, ৬ জনের প্রাণহানি; ৩৪ লাখ ৫০ হাজার মানুষ পানি বন্দী

22 August 2024, 8:03:36

বঙ্গ ডেস্ক :
ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ৯ জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টা পর্যন্ত চার জেলায় ছয়জনের প্রাণহানির তথ্য পাওয়া গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৩৪ লাখ ৫০ হাজার মানুষ। এখনো নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ঘর-বাড়ি ছেড়ে বন্যা কবলিতরা আশ্রয় নিচ্ছেন উঁচু জায়গা ও আশ্রয় কেন্দ্রেু। তবে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
বন্যাকবলিত জেলাগুলো হলো কুমিল­া, নোয়াখালী, ফেনী, ল²ীপুর, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম। নিহতরা হলেন, নাঙ্গলকোট পৌরসভার কেরামত আলী (৪৫), চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শাহাদাত হোসেন (৩৪), ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার অজ্ঞাত ব্যক্তি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া উপজেলার সুবর্ণা আক্তার (১৯), কক্সবাজারের রামু উপজেলার সাচিং মারমা (২৬) ও আমজাদ হোছন (২২)।

নয় জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গৌমতি, মুহুরী, মেঘনা, মনু, কুশিয়ারা, ধলাই, জুড়ী, খোয়াই ও সুরমাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

তবে বৃহস্পতিবার চলমান বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে বন্যায় ৬ জেলার ৪৩টি উপজেলায় ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬৬৩ পরিবারের ১৭ লাখ ৯৬ হাজার ২৪৮ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যা দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এসব এলাকায় সরকার ১ কোটি ৪২ লাখ টাকাসহ পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী বরাদ্দ দিয়েছে।

মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘন্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।

এ দিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে এক তথ্য বিবরণীতে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই বন্যায় আটটি জেলার প্রায় ২৯ লাখ মানুষ ক্ষত্রিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে বন্যার পানিতে ডুবে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে বলেও জানানো হয়।
তথ্য বিবরণীতে আবহাওয়া সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে বলা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও এর সংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে আসতে পারে। এ সময় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই, ধলাই নদীগুলোর সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি প্রাথমিকভাবে স্থিতিশীল থেকে পরবর্তী সময়ে উন্নতি হতে পারে।

বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলোতে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে উলে­খ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত বন্যা আক্রান্ত জেলার সংখ্যা আটটি। সেগুলো হলো, ফেনী, কুমিল­া, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া। এসব জেলার ৫০টি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৫৭টি ইউনিয়ন।

বন্যায় ফেনীতে একজন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন মারা গেছেন বলেও তথ্য বিবরণীতে উলে­খ করা হয়েছে।
গত ২০ আগস্ট থেকে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির তথ্য অনুযায়ী কুমিল­া, ফেনী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী ও মৌলভীবাজারসহ দেশের ৬ জেলার ৪৩ উপজেলা বন্যা প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, পানিবন্দি বা ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের আশ্রয় প্রদানের লক্ষ্যে ১ হাজার ৩৫৯টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ১৭ হাজার ৮৮২ জন লোক ও ৩ হাজার ৪৮৬টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। ৬ জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ৩০৯টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে।

বন্যা আক্রান্ত জেলাসমূহের জেলা প্রশাসককে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, সেনাবাহিনী, মেডিকেল টিম ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে সমন্বয় করে এক সাথে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। তথ্য ও সহযোগিতার জন্য ০২৫৫১০১১১৫ নম্বর চালু রয়েছে।
ফেনী জেলায় বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। সেনাবাহিনী থেকে ১৬০ জন সদস্য ৪০টি উদ্ধারকারী যান ফেনী জেলায় পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ১টি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। নৌবাহিনীর ৭১ জন সদস্য ও ৮টি উদ্ধারকারী যান কাজ করছে। এছাড়া বিজিবিসহ আরও নৌযান আনানো হচ্ছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত বন্যা সম্পর্কিত জেলাভিত্তিক তথ্যানুযায়ী বন্যায় ফেনী জেলার ৬টি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; এখানে পানিবন্দি ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা প্রায় ৩ লাখ। বন্যার পানিতে ডুবে এই জেলায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র খোলার সংখ্যা ৭৮টি, আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণকারী লোকসংখ্যা ২০ হাজার জন ও মেডিকেল টিম চালু করা হয়েছে ৭৬টি।
কুমিল­া জেলার ১১টি উপজেলার ৬৪টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্যোগ কবলিত জনসংখ্যা ৪৭ হাজার ৭৭০ জন, আশ্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা ৫৮৭টি ও আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণকারী লোকসংখ্যা ৩৯২ জন।
নোয়াখালী জেলার ৮টি উপজেলার ৮৬টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দি পরিবার সংখ্যা ১ লাখ ২১ হাজার ২০০ এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ১২ লাখ ২ হাজার জন, আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৩৪৫টি, আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণকারী লোকসংখ্যা ৭ হাজার ৭৫৩ জন, আশ্রিত গবাদি পশুর সংখ্যা ১ হাজার ৭৯৫টি ও মেডিকেল টিম চালু করা হয়েছে ৮৮টি।
চট্টগ্রাম জেলার ৩টি উপজেলার পানিবন্দি পরিবার সংখ্যা ২০ হাজার ১৭৫ এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৯৫ হাজার ৯০০ জন, আশ্রয় কেন্দ্র খোলার হয়েছে ২৩২টি। তবে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে এখনও কেউ আশ্রয় গ্রহণ করেনি। এখানে মেডিকেল টিম চালু করা হয়েছে ১২৭ টি।
মৌলভীবাজার জেলার ৬টি উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, পানিবন্দি পরিবার সংখ্যা ১২ হাজার ৯৬৬ এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৬১ হাজার ৬৬০ জন।
খাগড়াছড়ি জেলার ৯টি উপজেলার পানিবন্দি পরিবার সংখ্যা ১৫ হাজার ৪২২ এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৮৭ হাজার ৭১৮ জন। আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১১৭টি, আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণকারীর সংখ্যা ৭ হাজার ২৭৭ জন এবং আশ্রিত গবাদি পশুর সংখ্যা ১ হাজার ৬৯১টি এবং মেডিকেল টিম চালু করা হয়েছে ১৮টি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৮০০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
ফেনী জেলায় বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রণালয় জানায়, সেনাবাহিনী থেকে ১৬০ জন সদস্য ৪০টি উদ্ধারকারী যান ফেনী জেলায় পাঠানো হয়েছে। এছাড়া একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। নৌবাহিনীর ৭১ জন সদস্য ও আটটি উদ্ধারকারী যান কাজ করছে।

বঙ্গ নিউজ ওয়েবসাইট থেকে কোনো তথ্য গ্রহণ করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আমাদের অনুমতি ব্যতীত বঙ্গ নিউজ ওয়েবসাইটের কোনো সংবাদ, ছবি, ভিডিও বা অন্যান্য কনটেন্ট হুবহু বা আংশিক কপি, সংরক্ষণ, ব্যবহার বা পুনঃপ্রকাশ করা আইনগতভাবে দণ্ডনীয়। এই ধরনের কোনো কর্মকাণ্ড চিহ্নিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আমাদের কনটেন্ট ব্যবহার করতে চাইলে অনুগ্রহ করে আগে আমাদের লিখিত অনুমতি গ্রহণ করুন।

 বঙ্গ নিউজ কর্তৃপক্ষ

মন্তব্য: